Shailan Probeen Nibash

Shailan, Dhamrai

Dhaka

+880 1717 410975, +880 1771 027253

shailanprobeennibash@gmail.com

Society Reg. No.

S13260/2019

শৈলান-প্রবীণ-নিবাস

ঢাকার ধামরাইয়ের শৈলান প্রবীণ নিবাস। নিম্নবিত্ত প্রবীণ মানুষের কথা ভেবে নিবাসটি গড়েছে ‘মনোয়ারা ইসলাম-তাজুল ইসলাম ট্রাস্ট’। তাঁদের এ উদ্যোগে শামিল হয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। প্রবীণ নিবাসের বাসিন্দাদের জন্য কী সুযোগ–সুবিধা আছে, কেনই–বা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য এটি তৈরি হলো, দেখতে গিয়েছিলেন রাহীদ এজাজ

 

আঙিনায় সবুজ দূর্বা ঘাস। তার মধ্য দিয়ে হাঁটাপথ চলে গেছে চারতলা আবাসিক ভবন পর্যন্ত। ভবনটি উদ্বোধন করা হয়েছে গত ২৬ মার্চ। ৮০ জন নারী-পুরুষের আবাসনের ব্যবস্থা থাকলেও এখন পর্যন্ত আছেন কয়েকজন। প্রবীণ এই মানুষদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করি। একেকজন একেক জেলা থেকে এসেছেন। একেকজনের একেক গল্প। তাঁদের কথা শুনে মনটা আর্দ্র হয়ে ওঠে। তবে পারিবারিক আবহে এখানে আছেন জেনে আনন্দও লাগল।

গোড়াপত্তনের গল্প

প্রবীণ নিবাসের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে দিলরুবা কবিরের কাছে যাই। তিনি মনোয়ারা ইসলাম-তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের চেয়ারপারসন ও ট্রাস্টি। এই ট্রাস্টেরই উদ্যোগে আর দিলরুবা কবিরের প্রচেষ্টায় এক বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে শৈলান প্রবীণ নিবাস।

গোড়াপত্তনের গল্প শোনান দিলরুবা কবির, ‘১৫ বছর আগে প্রথম যখন সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্রে রেখে আসি, তখন ফেরার সময় মনের ভেতর একটা ধাক্কা লেগেছিল। মনে হয়েছিল, ছেলে-মেয়ে তো আর দেশে ফিরে আসবে না। তাহলে আমাদের কী হবে?’

প্রশ্নের উত্তরটাও যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেই পেয়ে যান দিলরুবা, ‘বোস্টনে ছিলাম আমরা। একদিন সকালে কাছাকাছি একটি ওল্ড-এজ হোম ঘুরে দেখতে গিয়েছিলাম। ফেরার সময় একটা প্রসপেক্টাস নিয়ে আসি। তখনই এমন একটি প্রবীণ নিবাস প্রতিষ্ঠার চিন্তা মাথায় আসে। দেশে ফিরে অনেকের সঙ্গে কথাও বলি।’

অনেকেই দিলরুবা কবিরের প্রস্তাবে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এরপর বিদেশে গেলেই ওল্ড-এজ হোম ঘুরে দেখতেন তিনি। যেখানেই গেছেন, চেষ্টা করেছেন সেখানকার হোমগুলো কীভাবে চলছে, তা ভালোভাবে জানার।

তারপর দিলরুবার ভিন্ন এক উপলব্ধি হলো, ‘একসময় বুঝলাম উচ্চমধ্যবিত্তের জন্য এ ধরনের কোনো নিবাস তৈরি করাটা অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে যায়। তখন আমার স্বামী আমাকে জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে তুমি প্রবীণদের জন্য একটি নিবাস করতে চাচ্ছ, ধামরাইয়ে আমাদের যে জায়গাটা আছে, সেখানেই তা করার চেষ্টা করো।’

শুরুতে ছোট পরিসরে নিবাস করার ভাবনা ছিল। বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে কথা বলেও বেশ উৎসাহ পেলেন। কয়েকজন আর্থিক সহায়তা দিতেও এগিয়ে এলেন, দু-তিনটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানও যার মধ্যে আছে।

এরপর শুরু হয় নির্মাণকাজ। সে কাজে শৈলান গ্রামের বিশিষ্টজন থেকে সাধারণ মানুষ, সবার অবদানই আছে। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণের পর নির্মাণকাজের তদারকি তাঁরাই করেছেন। স্থানীয়রা হাত না বাড়ালে প্রকল্প শেষ করাটাই অসম্ভব হতো বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা।

বাসিন্দাদের অপেক্ষায়

শৈলান প্রবীণ নিবাস চালু হয়েছে এক মাসের বেশি হলো। তবে থাকার জন্য মানুষের যতটা সাড়া পাওয়ার কথা, ততটা পাওয়া যায়নি। দিলরুবা কবির বলেন, ‘নিবাসে এখন পর্যন্ত সেভাবে বাসিন্দা পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে সামাজিকসহ নানা রকম চ্যালেঞ্জও আছে। ২০১৩ সালের সরকারি এক আইনে মা-বাবাকে দেখাশোনা না করলে সন্তানদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধান রাখা হয়েছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধান অবশ্যই থাকা উচিত। কিন্তু যাঁদের সামর্থ্য নেই, তাঁরা কীভাবে মা-বাবার দেখাশোনা করবেন? তাঁদেরই আমরা জীবনের গোধূলিবেলায় স্বপ্নের আবাস উপহার দিতে চাই।’ শিগগিরই বাসিন্দায় পূর্ণ হবে শৈলান নিবাস, এমনটাই আশা করেন দিলরুবা কবির।

কিন্তু এই আবাস শুধু নিম্নবিত্তদের জন্য কেন? দিলরুবা কবির বলেন, ‘উচ্চবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্তদের একাকিত্ব আছে, এটা ঠিক, তবে খাওয়া–পরা আর চিকিৎসা নিয়ে তাঁদের ভাবতে হয় না। কিন্তু নিম্নবিত্তদের তো চিকিৎসার সুবিধা একেবারে নেই বললে চলে। এসব কথা ভেবেই শৈলান নিবাসে শুধু নিম্নবিত্তের লোকজনের থাকার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

সাধারণত প্রবীণ নিবাস মানেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে শৃঙ্খলে আবদ্ধ জীবন। শৈলান নিবাসে গিয়ে তা কিন্তু মনে হলো না। এখানকার বাসিন্দারা জানালেন, অনেকটা পারিবারিক আবহেই কাটছে তাঁদের দিনকাল। অবসর কাটানোর উপযোগী সুবিধা যেমন এখানে আছে, তেমনি রয়েছে কর্মব্যস্ত দিন কাটানোর সুযোগ। বাসিন্দাদের পরিবারের সদস্যরা চাইলে যেকোনো সময় তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে নিবাসে যেতে পারেন। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় যেকোনো সময় বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন নিবাসের বাসিন্দারা।

শেষ বয়সে এসে অনেকেই বিশেষ করে নিম্নবিত্ত মানুষজন পরিবারের যত্ন–আত্তি থেকে বঞ্চিত হন। অনেকেরই আবার সেভাবে কোনো ঠিকানা থাকে না। শৈলান প্রবীণ নিবাস ঘুরে দেখার পর মনে হয়েছে সে–সব মানুষের জন্য এটি হতে পারে ব্যতিক্রমী এক ঠিকানা।

Read this on Newspaper : https://www.prothomalo.com/lifestyle/শৈলান-প্রবীণ-নিবাস

ই-মেইল: shailanprobeennibash@gmail.com

মুঠোফোন নম্বর: ০১৭৭১০২৭২৫৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *